স্টাফ রিপোর্টার:
ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশির রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মালামাল-যন্ত্রপাতি পৌঁছাতে ঈশ্বরদী-পাকশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগনালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন সরকারী রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদ।
৩৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্পের যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শেষে রেলপথমন্ত্রী, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
সোমবার (৯ জানুয়ারী) দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৪ টা ঈশ্বরদী থেকে পাকশি রেলরুটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘেঁষে নব-নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্টেশন পর্যন্ত গ্যাংকার ইঞ্জিনে পরিদর্শন করেন।
তার আগে সকাল ৯টায় পাকশী শতবর্ষের রেলওয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে মোটরট্রলিতে চড়ে সরকারী রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদসহ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশলী ও বিভাগীয় প্রকৌশলীরা ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন আসেন।
এ প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নির্মান কাজ দেখে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক, পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ, পরিবহন কর্মকর্তা, আনোয়ার হোসেন, সেতু প্রকৌশলী, আব্দুর রহিম, বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (সংকেত) এম,এম, রাজিব বিল্লাহ, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিএলের জি এম, রাসেল আহমেদ এসিএলের জি এম ইমরান খান প্রমুখ।
পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। ভারতের জিপিটি এবং বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিএল অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ৩৩৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৬ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন প্লার্টফর্ম উঁচু, ইন্টারলকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা, প্রবর্তন, স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২৫ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, ৭ টি কালভার্ট, ১৩ টি লেভেল ক্রসিং গেট, একটি ‘বি’ শ্রেণির স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফর্ম শেষ করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আসাদুল হক জানান, ব্রিটিশ আমলের পাইলট’ ট্রেন চলতো। নব্বই দশকের শুরুতেই তৎকালীন সরকার কোনো কারণ ছাড়াই পাইলট ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ রেলপথে শুধু রেলের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মোটর ট্রলি মাঝে মধ্যে চলাচল করত। পরিত্যক্ত রেললাইন সরিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে।
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দৃশ্যমান রেলসেকশনটি আবার যেন ফিরে পেয়েছে ঐতিহ্য। এই রেলপথটি আবারো যুক্ত হলো দেশের রেল নেটওয়ার্কে।
প্রকল্প কর্মকর্তা আরও জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা যে ইচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক আরও জানান, ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্পের যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে রেলপথমন্ত্রী, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছেন।
সরকারী রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদ জানান, প্রকল্পের সবগুলো নির্মান কাজ পরিদর্শন শেষ হয়েছে। পরিদর্শন বেশ সন্তোষজনক। দ্রুতই রিপোর্টটি মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে গেলে রেলপথমন্ত্রী প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করবেন। এই প্রকল্প চালু হলে মংলা এবং চট্রগ্রাম বন্দরসহ বিদেশ থেকে যে কোন প্রকার মালামাল এ লাইনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্বল্প খরচে নিরাপদে সরাসরি নিয়ে আসবে।
সরকারী রেল পরিদর্শক রুহুল কাদের আজাদ আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা,শেখ হাসিনা রেলকে নিয়ে যা বাস্তবায়ন করার কথা ভাবছেন। তার সেই পরিকল্পননা বাস্তবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। যা কি-না দেখলে বোঝা যায়। এ রেলরুটে মালবাহী ট্রেন ছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়া কোন ট্রেন আপাতত চলবে না। তবে যদি এলাকাবাসীর চাহিদা থাকে এখান থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত একটি স্যাটল ট্রেন চলাচল করা যায় কিনা? বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে অবগত করবো।
উল্লেখ্য, ১৯১৫ সালে পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের কিছু সময় পর তৎকালীন সাঁড়াঘাটের বরফকল থেকে বরফ পরিবহন করার সুবিধার্থে তৎকালীন ব্রিটিশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঈশ্বরদী জংশন থেকে কিছুটা পশ্চিমদিক দিয়ে এই ব্রডগেজ রেলপথটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে পাকশী বিভাগীয় সদর দফতরে কর্মরত সেই সময়কার রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে যাতায়াতের প্রয়োজনে ও সুবিধার্থে এই রেলপথটি দিয়ে ‘পাইলট’ নামে একটি ট্রেন চালু করা হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তৎকালীন সরকার এই পাইলট ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এই রুটে দীর্ঘ ৩০ বছর কোন রেলযান আর চলাচল করেনি। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দৃশ্যমান রেলরুট ফিরে পেতে যাচ্ছে সেই পুরোনো ঐতিহ্য।