স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার শাজাহানপুরে মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, অটো ভ্যান চুরি , বাসাবাড়িতে চুরির তালিকা ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।সর্বত্র ওত পেতে আছে চোর।প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি ও ঘটছে।ছিনতাইকারির হাতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারে পুলিশের উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা না থাকায় আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ। আর মাসে কী পরিমান চুরির ঘটনা ঘটছে তার পরিসংখ্যান করতে পারেননি বলছেন থানা পুলিশ।
জানাযায়, ১১মার্চ শালুকগাড়ি এলাকা থেকে দিনে আপেল মাহমুদ এর পালসার মোটর সাইকেল চুরি হয় এবং রাতে কাটাবাড়িয়া গ্রামে গ্যাস ব্যাবসায়ী নুরুন্নবী এর সুজকি জিকসার মোটর সাইকেল চুরি হয়।
নিশ্চিন্তপুর এলাকায় গত ২২মার্চ দিবাগত রাতের কোন এক সময় ইজিবাইক চালক রাজু মন্ডল(৩২)কে হত্যা করে ইজি বাইক ছিনতাই করে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দূর্বৃত্বরা। পরদিন বৃহস্পতিবার(২৩মার্চ) ভোরে মহাসড়কের পাশে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এর আগেও ওই এলাকায় ভ্যন চালককে চুরিকাঘাতে হত্যা করে তাঁর কাছে থাকা টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
পরদিন ২৩মার্চ সকাল সোয়া ৮টার দিকে নয়মাইল হাট থেকে আরেকটি ইজিবাইক চুরি হয়। হাটে কাঁচামাল নামিয়ে দেয়ার সময় ১০মিনিটের চোখের আড়াল হতেই চুরি হয় চুপিনগর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে আব্দুল আলিম(৩৬) এর ইজিবাইক। এটির আয় দিয়ে পুরো সংসার চলত। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার(২১মার্চ) রানীরহাট এলাকা থেকে আরেকটি মোটর সাইকেল চুরি হয়। ২২মার্চ দুবলাগাড়ি হাট এলাকা থেকে ভান্ডারপাইকা গ্রামের ট্রাক চালক আবুল কাশেম এর ডিসকভার মোটর সাইকেল চুরি হয়। এর কয়েকদিন আগে আড়িয়াবাজার বাস স্ট্যান্ড থেকে চুরি হয় মাঝিড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম এর এপাচি আরটি আর মোটর সাইকেল। এই ঘটনার কিছু দিন আগে একই স্ট্যান্ড থেকে চুরি হয় কাটাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল মতিন এর একটি ইজিবাইক।
২এপ্রিল মাঝিড়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল বাড়ির ছাদের রড রড চুরি করতে গিয়ে আটক হয় স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ডোমনপুকুর টিকাদারপাড়া গ্রামের আবু সাইদের ছেলে সাকিব হাসান(১৯)। বাড়ির ভাড়াটিয়া তাঁকে আটক করে পরে পুলিশে দেন বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিক।
সম্প্রতি কাটাবাড়িয়া গ্রামে বাড়িতে রাতে জানালার গ্রীল কেটে চুরি হয়। একই এলাকায় স্বামী স্ত্রীকে বেঁধে বাড়ির মূল্যবান জিনিস চুরির ঘটনা ঘটে। তারও কিছুদিন আগে কাটাবাড়িয়া মোড়ে মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক এর দোকানে রাতে চুরি হয়।
মোটর সাইকেল হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে এবং পুলিশের কাছে ধরনা দেয়া পারতেখুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, এক বছর আগে আমার নতুন পালসার মোটর সাইকেল হারানোর পর থানা পুলিশের কাছে যাই। তাঁদের পরামর্শে থানায় অভিযোগ দেই। পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত ধরনা দিয়েই যাচ্ছি। পুলিশও বলছে দেখছি দেখছি। যদিও আজ পর্যন্ত সেটি উদ্ধার হয়নাই।
চুপিনগর গ্রামের গ্রীল ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বুদ্ধি বলেন, ২০১৩সালে এক শুক্রবারে জুম্বার নামায আদায়ের সময় আমার ডিসকভার মোটর সাইকেল চুরি হয়। আজ পর্যন্ত সেটি উদ্ধার হয়নাই।
মাঝিড়া স্ট্যান্ডে রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, চুরি ছিনতাই আশংকাজন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা সব সময় আতংকে থাকি। আমার দোকানে একবার চুরি হয়েছে। রাতে ব্যবসা বন্ধ করে বাড়িতে গিয়েও ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। মনে হয় এই বুঝি চোর হানা দিল।
আড়িয়া কাটাবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষক সালমা খাতুন বন্যা জানান, চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। প্রচন্ড গরমেও আমরা জানালা খুলে রাখতে পারিনা। আমরা প্রতি নিয়ত আতংকে থাকি।
রহিমাবাদ বিব্লক এলাকার বাসিন্দা উপজেলা স্বাস্থ্যসহকারি রেজাউল করিম বকুল বলেন, এলাকায় বাসা বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই চুরির ঘটনা ঘটছে। বাড়িতে জানালা আছে কিন্তু তা খুলে রেখে বাতাস নিতে পারিনা চোরেদের ভয়ে।
জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী জানান, মাসে কী পরিমানে চুরি হচ্ছে এর পরিসংখ্যান আমরা এখনো করে উঠতে পারিনাই। আইন শৃঙ্খলা ভালো রাখতে আমরা কাজ করছি।