রিপন কান্তি গুণ, বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি;
মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে গতকাল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী তিথিতে দেবীকে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে নানা উপাচারে পূজা শেষে, আজ সোমবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী তিথি। শাস্ত্র মতে মহাষ্টমীই হলো দুর্গাপুজার গুরুত্বপূর্ণ দিন। মহাষ্টমীর দিনে দেবী দুর্গার অস্ত্রসমূহকে দেবজ্ঞানে পূজা করা হয়। মহাষ্টমী উপলক্ষে নেত্রকোনার বারহাট্টায় প্রতিটি মণ্ডপে সকাল থেকে ভক্তদের প্রচন্ড ভির লক্ষ্য করা গেছে।শারদীয় দুর্গোৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল মহাষ্টমী। ষষ্ঠী থেকে দশমী, এই চারদিনে বেশ কয়েকবার দেবীর অঞ্জলি হয়। কিন্তু, অষ্টমী পুজোয় অঞ্জলি দেওয়ার জন্যই ভক্তরা বেশি উৎসাহ দেখান। এজন্য ভক্তদের সকাল থেকে উপবাস, সাতসকালে স্নান-সহ তাঁদের নানা আচার পালন করতেও দেখা যায়।
এই তিথিতে মানুষ পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবী দূর্গা কে নিজের মনের ইচ্ছা জানায়। মহাষ্টমীর দিনে চামুন্ডা রূপে দেবী দূর্গা কে পুজো করা হয়। এই দিন বিভিন্ন মন্দিরে মনের বাসনা পূর্ণ হলে মানষিক (মান্নত) হিসাবে পাঠা, কবুতর, মহিষ প্রভৃতি বলি দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে।
এই দিন বেশিরভাগ মন্দিরে দেবী দূর্গা কে অন্ন-ভোগ ছাড়াও লুচি-সুজি ও ফলাফলদিসহ অন্যান্য ভোগ নিবেদন করা হয়। এই মহা অষ্টমী হল দূর্গা পূজার মধ্যে একটি অন্যতম সেরা দিন।
দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা । দূর্গাপূজার অষ্টমীর দিন করা হয় এই বিশেষ পূজা, এই পূজার সময়কাল ৪৮ মিনিট। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালিন পূজা।
সকাল থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয়েছে ভক্তবৃন্দদের পুষ্পাঞ্জলি। সাকালে বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটায় কিছুক্ষণ পর স্বভাবিক হলেও সারাদিন জুড়ে মেঘলা আকাশে মেঘের খেলার সাথে হালকা বৃষ্টি চলছেই।
পুষদের গায়ে শোভনীয় পোশাক পঞ্জাবী, মহিলাদের নানা রঙের শাড়ি এবং শিশুদের বিভিন্ন পোশাকের সাজে পুরো বারহাট্টার হিন্দু সম্প্রদায় এখন পুজার আনন্দে ব্যস্ত।
পুজা কাজ সেরেই মেঘলা আকাশকে উপেক্ষা করে বিকাল থেকেই অনেকেই বের হবেন, বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে। ভিড়কে তোয়াক্কা না করেই অষ্টমীর রাতে দুর্গা ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত সবাই।
সারাদেশের মতো বারহাট্টাতেও অষ্টমীতে দর্শনার্থীদের স্রোত সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় পুলিশ, আনসারসহ স্বেচ্ছাসেবকদের। সন্ধ্যার পর থেকেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে শুরু হয় দর্শনার্থীদের ভির।
বারহাট্টা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ নিয়েই আমরা পথ চলতে চাই। বাংলাদেশ একটা অসম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষ সকলে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দু – মুসলিম সবাই মিলে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করছি ।
তিনি আরও বলেন, হিন্দু-মুসলিম বাংলাদেশে সবসময় ধর্মীয় সম্প্রতির বন্ধনে আবদ্ধ ছিল এবং আছে। তাই প্রতিটি উৎসবের সময় সকলে একসঙ্গে সামিল হয়ে আনন্দ উপভোগ করি। মাঝে মাঝে কিছু দুষ্ট চক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায়। আমরা সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করবো।
বারহাট্টা থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক জানান, আজ অষ্টমী পূজায় দর্শনার্থীদের ভির বেশি হবে তাই, ভির সামাল দিতে আমার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা প্রস্তুত আছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পুরুষ-মহিলা দর্শনার্থীদের পৃথক রাস্তার ব্যবস্থা রাখতে প্রতিটি পূজা কমিটিকে বলা আছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করবে। আমি নিজেও প্রতিদিন প্রতিটি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করছি।