রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
নির্জন বাড়িতে বসবাস ছিল দম্পতির। গভীর রাতে হঠাৎ চিৎকার। কিন্তু সে চিৎকারের ধ্বনি পৌঁছায়নি এলাকার কোন বাড়িতে। অবশেষে রক্তাক্ত ভিকটিমকে ফেলে স্ত্রী ছুটে যান এক আত্মীয়ের বাড়িতে।
তাঁরা দ্রুত ছুটে আসেন ভিকটিমের বাড়িতে। রক্তাক্ত নিথর দেহ নিয়ে ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণে ততক্ষণে নিভে গেছে ভিকটিমের প্রাণ প্রদীপ।
ঘটনা নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন ভায়েলা গ্রামের। ভিকটিম রফিকুল ইসলাম (৬০) ২য় স্ত্রীকে নিয়ে ভায়েলা গ্রামে সুখের সংসার সাজিয়েছিলেন সামান্য জায়গা কিনে বাড়ি বানিয়ে। বাড়িটি নির্জন হওয়ায় এলাকার মাদকসেবীরা প্রায়শই মাদক সেবন করতো সেখানে।
বাঁধা দিলে বিপদ জেনেই বাড়ির কর্তা বাঁধা দিতে সাহস পেতেন না। তবে মাদকসেবীরা প্রায়শই সে বাড়ি থেকে গাছের ফল, খাবার জোর করে নিয়ে নিয়ে খেত। অসহায়ের মত বাড়িতে থাকা দম্পতি তাদের নির্যাতন সহ্য করে যেতো।
গত ২০ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টায় ২/৩ জন অজ্ঞাত লোক এসে ডাক দেয় রফিকুল ইসলামকে। বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম সরল বিশ্বাসে দরজা খুলে বের হলেই দেখেন তিনজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ানো। চিৎকার দিতেই আক্রমণ করে তারা।
ধারালো ছুরি দিয়ে সজোরে একাধিক আঘাতে রক্তাক্ত করে ফেলে দেয় তাঁকে। এরপর দু’জন ঘরে প্রবেশ করে বেঁধে ফেলে গৃহকর্তী রুপালী বেগম (৫০) কে। একে একে কেড়ে নেয় তার হাতে থাকা স্বর্ণের চুরি, গলার চেইন, হাতের আংটি, কানের দুল, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এরপর পালিয়ে যায় তারা। কিন্তু রুপালী বেগম তাদের কাউকেই চিনতে পারেনা।
অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় দায়ের হয় হত্যা মামলা “৫৯(৬)২২”। কিন্তু ক্লুলেস মামলার কোন কূল কিনারা করতে না পারায় পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ এর নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার চলে আসে ডিবি পুলিশের নিকট। নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই মো. হাফিজুর রহমানকে দেয়া হয় তদন্তভার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. তরিকুল ইসলাম এর সার্বিক সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়। গ্রেপ্তার করা হয় রূপগঞ্জ উপজেলার পাচাইখা গ্রামের মো. সুজন দেওয়ানের ছেলে মেহেদী দেওয়ান (২২) কে।
জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে ঘটনার আদ্যোপান্থ। মূলতঃ নেশার টাকার জন্যই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় রফিকুল ইসলামকে। হত্যাকারীরা জানতো রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর শরীরে সবসময় গহনা পরা থাকে।
আর নেশার টাকা জোগাড় করতেই মাদকসেবীরা এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করে। ২৪ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মেহেদী দেওয়ান তার অপরাপর সহযোগিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।