ফৌজি হাসান খান রিকু,লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
ঈদ এলেই নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু হতো মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢল নামতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া ঘাটে এই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিন দুর্ঘটনা এড়াতে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি)। সে অনুযায়ী গত মঙ্গলবার কে-টাইপ ফেরি কলমিলতা ও কুঞ্জলতা দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছিল। গত দুদিনে (মঙ্গল ও বুধবার) শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌপথে দুই হাজার ১৯৬টি মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পদ্মা সেতুতে মোটর সাইকেল চলাচলের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঘোষণারপর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে মোটর সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এতে পুনরায় ফাঁকা হয়ে যায় শিমুলিয়া ফেরি ঘাট। ঘোষণার আগে ২ দিন ফেরিতে মোটরসাইকেল নদী পার হলেও আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলায় আবার সুনসান নিরব হয়ে পড়েছে শিমুলিয়া ঘাট। মোটরসাইকেল চলাচলের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছেন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা। যার কারণে পদ্মার পাড়ের শিমুলিয়া ঘাটে আগের মতো হাঁকডাক নেই।সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে শিমুলিয়ার ভিআইপি (৪ নম্বর) ফেরি ঘাটে মোটরসাইকেল ও যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছে ফেরি কুঞ্জলতা। ঘুমিয়ে সময় পার করছেন ফেরির চালক ও কর্মচারীরা। নদীর তীরে স্পিডবোট, ফেরি, লঞ্চ নোঙর করে রাখা। তবে পারাপারে নেই কোনো যাত্রী। খালি পড়ে আছে খাবারের দোকান। ক্রেতা না থাকায় অধিকাংশ দোকানের স্টাফরা দোকানের ভেতরে অলস বসে আছেন।ফেরি কুঞ্জলতার মেরিন সেকশনে থাকা মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা এখানে ফেরিতে মোটরসাইকেল পারাপার করা জন্য এসেছিলাম। গত দুইদিনে মোটরসাইকেল যাত্রীদের ভিড় ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় কেউ ঘাটে আসছে না। তবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘাটেই থাকব। যদি কোনো মোটরসাইকেল আসে তাহলে আমরা পারাপার করতে প্রস্তুত আছি।বিআইডাব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জামাল হোসেন বলেন, ফেরি চালু হওয়ার প্রথমদিন মঙ্গলবার এই নৌপথে ৯০৫টি মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়। পরেরদিন বুধবার এক হাজার ২৯১টি মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়েছিল। কিন্তু আজ পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় ফেরি ঘাটে কোনো যান ও যাত্রী নেই। কারণ কেউ চায় না দুই ঘণ্টা রোদে পুড়ে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে। যেখানে অল্প সময়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঘরে ফেরার সুযোগ আছে।তিনি আরও বলেন, এখন ফেরির চালক ও স্টাফসহ সংশ্লিষ্ট সবাই অলস সময় পার করছেন। কিন্তু পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা মোটরসাইকেল পারাপার করতে প্রস্তুত আছি।