নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধি:
মানবতার সেবায় এগিয়ে চলেছে শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ঐক্য বন্ধন’। মানব সেবার মন-মানসিকতা ও সেবার ব্রতকে পুজি করে স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহ প্রকাশ করা একঝাঁক মানবদরদী তরুণ-তরণী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্য বন্ধন’ মানবসেবী নামক এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দুরন্ত গতিতে পথ চলা এবং সেবা করায় তাদের লক্ষ।
মানবসেবী সংগঠনটির সদস্যরা বিগত প্রায় ৪ বছর ধরে নিজেদের উদ্যোগে দেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি জেলার অনেক অসহায় গরীব রোগীদের কখনও আর্থিক সহযোগিতা, কখনো নিজেরা রক্ত দান করে, আবার অসহায় অসুস্থ রোগীর রক্তের প্রয়োজনে রক্তদাতা সংগ্রহের আপ্রাণ চেষ্টাসহ স্বাস্থ্য সেবায় সহযোগিতা করা। আর এ সকল মানব সেবামূলক কাজ ধরে রাখার প্রয়াসে নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সামজিক সংগঠন ‘ঐক্য বন্ধন’।
‘ঐক্য বন্ধন’ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী, সেবামুলক অলাভজনক একটি সংগঠন। স্বেচ্ছায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এই সংগঠনের মূল কাজ। যশোর জেলা কেন্দ্রীক ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই সংগঠনের পথচলা শুরু হলেও এখন শুধু যশোর নয়-দেশের দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একযোগে মানবতার অগ্রযাত্রায় কাজ করছে এই সংগঠন। এই সংগঠনের সদস্যরা নিজ উদ্দ্যোগে স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে রক্ত দান কর্মসূচী, গরীর ও অসহায়দের সাহায্য করা, ঈদে অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ, গরীর ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিা উপকরণ বিতরণ, গরীর ও অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে শিাদান কার্যক্রম, অসহায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্প, সাধ্যমত বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, বৃরোপণ কর্মসূচি ছাড়াও ঝরে পড়া শিার্থীদের বিদ্যালয় মুখী করা, সচেতনতামূলক সেমিনার লিফলেট বিতরনসহ নানান কার্যক্রম করছে এই সংগঠনটি।
সংগঠনে রয়েছে একটি কার্যক্রম কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় নিয়মিত ও আহবায়ক কমিটি। মুলত: ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালিন সভাপতি মাহমুদ হাসান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক রনি রহমানসহ প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য আব্দুর রাকিব, আবু হুসাইনসহ অনার্স, ¯œাতক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সেবাপ্রেমি কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে একঝাঁক তরুণ-যুবকদের উদ্যোগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। একে অপরের সাথে আলোচনার পর পরিশেষে ঐক্য মতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নাম ‘ঐক্য বন্ধন’। আলোচনা পর সংগঠনটিতে মাহমুদ হাসান সোহাগকে প্রতিষ্ঠাকালিন সভাপতি ও রনি রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি তৈরী করেন। শুরু হয় পথ চলা। সংগঠনটির সমাজসেবামূলক কাজ দেখে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠিসহ আশপাশের অন্য যুবকেরাও এগিয়ে আসেন। পরে স্বেচ্ছায় পার্শ্ববর্তী অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়েছেন ‘ঐক্য বন্ধন’ সংগঠনে। যার ফলে ‘ঐক্য বন্ধন’ সংগঠনটি এখন শুধু যশোর জেলায় না, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জুড়ে এখন সেবামূলক কার্যক্রমের একটি উদাহরণ।
এ বিষয় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদ হাসান সোহাগের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘ঐক্য বন্ধন’ স্বেচ্ছাসেবী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সংগঠনের সকল সদস্যরা মানবতার পে কাজ করে। শিক্ষার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যেক মানুষকেই সুশিা অর্জন করতে হবে। উচ্চ শিা আর সুশিা এক নয়, উন্নত সমাজ গড়তে সুশিার বিকল্প নেই। অন্যের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। অসহায় ও অক্ষমদের উপকারে প্রকৃত সুখ খুজে পাওয়া যায়। উৎসর্গ মুখী চিন্তা ভাবনা এবং কাজ করার মাধ্যমে কৃতিত্ব অর্জন করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, এই সংগঠনের আলাদা কোন ফান্ড নেই। শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা থেকে কিছু-কিছু জমিয়ে এ সংগঠনের ফান্ডে জমা রাখে-সেটাই এর মুল ফান্ড। বেশির সদস্য ছাত্র হওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের পে অনেক কষ্টকর হয়ে যায়, তাঁদের পাশে সমাজের বিত্তবান মানুষ এসে দাঁড়ালে হয়তো তারা আরও অনেক বেশী মানুষকে তাদের এই সেবা দিতে পারবে। যেহেতু তারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেহেতু তাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিনিয়ত মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। মূলত নিজদের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তায় তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে সদস্যের বাইরেও যদি কেউ নিজ থেকে কোন ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন-তাহলে সেটা তারা গ্রহণ করে থাকে। দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজপতিরা আমাদের তেমন সহায়তা করে না বরং সমালোচনা করে। সমাজের নির্দিষ্ট শ্রেণির কিছু লোক আছে তারা ভাল কাজে বাহবা তো দেয় না বরং আমাদেরকে পিছুটান দেয়। আমাদের সমাজে মুক্ত চিন্তার বড়ই অভাব। তবে আমরা সকল সমালোচনা পিছনে ফেলে গরীব, অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ছুটে চলি।
২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ঐক্য বন্ধন’। সংগঠনের আওতায় সেবকমুলক এ মহতী কাজ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংকট কালীন সময়ের শুরু থেকে অসহায়, দুঃস্থ্য, কর্মহীন, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং ঘরবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কখনও নিজের উদ্যোগে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করে চলেছেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ঐক্য বন্ধন’ এলাকার অসহায় মানুষের সেবা প্রদান করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা ও এলাকাবাসী তাদেরকে সহযোগিতা করে-এগিয়ে চলা উক্ত সংগঠনের সার্বিক চলমান গতি তরান্বিত কর।