ওবাইদুর রহমান নয়ন, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
বাংলাদেশে ফিরে এসে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রস্তুুতি ও সেখান কার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে যাওয়া প্রতিনিধি দলে থাকা রোহিঙ্গারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারের কার্যক্রমের বিষয়ে।
শুক্রবার (৫মে) বিকালে ওই প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার টেকনাফের মিয়ানমার -বাংলাদেশ ট্রানজিট ঘাটে এসে পোঁছালে রোহিঙ্গা নেতারা উক্ত মতামত প্রকাশ করেন গণমাধ্যমে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন – রোহিঙ্গা ক্রাইসিস বাংলাদেশের কাছে একমাত্র সমস্যার সামাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। সেই নিরিখে আমরা মিয়ানমারে গিয়েছিলাম। এবং সেগুলো আমরা সেখানে ঘুরে ফিরে দেখেছি এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা দেখেছে। আমরা মিয়ানমার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। এবং আমরা রোহিঙ্গাদের জন্যই করেছি। আমাদের সাথে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাই ছিল। এখন রোহিঙ্গারা জানতে পারবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। রোহিঙ্গারা সন্তুষ্ট নয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, এরকম কথা বললে তো সমস্যার সমাধান হবে না দুই পক্ষের ছাড় দিতে হবে এবং সন্তুষ্টির বিষয়টি আপেক্ষিক। যে সমস্যাটি ৬০/৭০ বছরের সমাধান হচ্ছে না তা এক দু’দিনে সম্ভব নয়। আমরা প্রত্যাবাসন চাই। আমরা প্রত্যাবাসন টেকসই করতে কাজ করছি। এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল ফের বাংলাদেশে আসবে তারা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলবে এবং এসব কিছু করা হচ্ছে তাদের ফিরে যেতে আগ্রহী হওয়ার জন্য। তাদেরকে আশ্বস্ত করার জন্য। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের স্বদ ইচ্ছা আমরা দেখতে পেয়েছি।
মিয়ানমারে পরিদর্শন গিয়ে ফিরে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্য থাকা দুই রোহিঙ্গা নেতা, সেলিম ও সুফিয়ান জানান, মিয়ানমারে গিয়ে আমরা তাদের নির্মাণকৃত ক্যাম্প দেখতে পেয়েছি। জাতীয় পরিচয় পত্রের বিষয় জানতে চাইলে আমাদেরকে এনবিসি কার্ড দিবে বলে জানান। আমরাদের জাতীয় পরিচয় পত্র না দিলে আরমা জাবো না এবং আমরা তাদের থেকে কিছু চাই না আমাদের পূর্বের বসতভিটা ও জাতীয় পরিচয়পত্র ফিরে দিলে আমরা অবশ্যই ফিরে যাব।
তিনি আরো জানান, মিয়ানমারে অবস্থিত অন্যান্য জনগোষ্ঠী যেভাবে মিয়ানমারে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে সেভাবে যদি আমরা অধিকার না পাই তাহলে আমরা মায়ানমারে ফিরে যাব না ।
তবে এর আগে একই দিনে সকালে
মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ২৭ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল। যেখানে ২০ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ৩জন রোহিঙ্গা নারীও সহ ১জন অনুবাদক ও ৬ জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়েছেন। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার জন্য ২টি বিজিবির স্পিড বোট সহ ১৬ জন বিজিবি সদস্য রয়েছে বলে জানাগেছে।
শুক্রবার (৫মে) সকালে বাংলাদেশ – মিয়ানমার টেকনাফ ট্রানজিট জেটি ঘটে হতে ওই টিম টি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রতিনিধি দল টি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে প্রস্তুুতি ও সেখান কার পরিবেশ পর্যবেক্ষণে করবেন বলে জানাগেছে। তবে তারা একই দিন সন্ধা নাগাত ফিরে আসবেন বলে জানান। মূলত প্রত্যাবাসন হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যেখানে তাদের রাখা হবে সে জায়গা টি পরিদর্শন করবেন বলে জানাগেছে।এর আগে বাংলাদেশ থেকে ৮লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা পাঠানো হয় মিয়ানমারের কাছে। ওই তালিকা থেকে ফেরত নিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম দফায় প্রায় ১ হাজার ১৪০ জনকে নির্ধারণ করে দেশটি। সেখান থেকে ৪২৯জনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ছিল মিয়ানমার। পরে গত ১৫ মার্চ ১৯ সদস্যদের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশের টেকনাফে এসে ১৭৭ রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৮০ জনের সাথে সাক্ষাৎ গ্রহন করে মিয়ানমারে ফিরে যায়।
তবে সচেতন মহলের ধারনা যাচাই বাছাই করা সে ৪৮০ জন দিয়ে শীঘ্রই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। ২০১৭ সালে নিজদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তবে বরাবরে রোহিঙ্গাদের কামানা ছিল তাদের অধিকার গুলো নিয়ে তাদের জন্ম ভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে।