নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এখন সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে রূপ পেয়েছে। চোখ মেললেই দেখা যায় রাস্তার বিভাজনে বাহারী ফুলের গাছের সঙ্গে হরেক রকমের সড়কবাতি। যেন এক স্বপ্নপূরীর নগরী। সন্ধ্যা নামলেই নগরীর রাস্তা হয়ে ওঠে আলো ঝলমল। সঙ্গে নতুন প্রশস্ত সড়ক, ফ্লাইওভার আর পদ্মাপাড়ের বিনোদন কেন্দ্র দিয়ে সৌন্দর্যপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে রাজশাহী সিটি। আসন্ন সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে নগর উন্নয়নের হিসেব নিকাশ। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজ সব মহলে প্রশংসা কুড়ালেও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক অংশে পিছিয়ে তিনি। এবারের রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচনেও লিটন আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র পদে লড়ছেন।
শেষবার ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংবাদ সম্মেলন করে ১৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন লিটন। তিনি নগরবাসীকে দিয়েছিলেন ৮২ প্রতিশ্রুতি। মেয়াদের শেষ সময়ে এসে মাত্র ১৪ প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছেন মেয়র লিটন। যদিও সেই ইশতেহারে এমন অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল, যেগুলো মেয়রের কাজের আওতায় পড়ে না। এর পুরোভাগে ছিল কর্মসংস্থান। গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে গার্মেন্ট শিল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা এবং বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক দ্রুত বাস্তবায়ন করে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছিল। তবে কর্মসংস্থানে তিন চমক দেখাতে পারেননি। এবারও নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দিতে চাইছেন তিনি।
রেশম কারখানা ও টেক্সটাইল মিল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু, পাটকল সংস্কার, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন এবং কুটির শিল্পের সম্প্রসারণের কথাও উল্লেখ ছিল ইশতেহারে। তবে বাস্তবতা হলো– এই ৫ বছরে গার্মেন্ট শিল্প গড়ে তোলা যায়নি। বিশেষ অর্থনৈতিক জোনও রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক নিয়ে তৎপরতা থাকলেও পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। রেশম কারখানা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারেনি।
পিপিপির ভিত্তিতে বিটিএমসির বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলও ফের চালুর অনুমোদন থাকলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। পাটকল সংস্কারের প্রতিশ্রুতি পূরণ দূরের কথা, তা বন্ধই হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠেনি। হয়নি কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ।
২০১৮ সালের লিটনের ইশতেহারের দ্বিতীয় দফায় ছিল শিক্ষা। এর মধ্যে ছিল রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত বাস্তবায়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নতুন একাধিক বালক ও বালিকা স্কুল-কলেজ নির্মাণ, পূর্ণাঙ্গ সংগীত, ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক মহাবিদ্যালয় স্থাপন, বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা আর পুরো নগরীর নাগরিক কেন্দ্রগুলোকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করা যায়নি। ঢাকার দু’একটি নামি বেসরকারি স্কুলের শাখা রাজশাহীতে এসেছে। সরকারি হয়েছে কয়েকটি পুরোনো বেসরকারি স্কুল। এর বাইরে এই দফার আর কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি নগরীকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায়ও আনা যায়নি ।
শেষবারের ইশতেহার অনুযায়ী, লিটন প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মাতৃসদন স্থাপন করে নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। দ্রুত শেষ করতে চেয়েছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ। প্রস্তাবিত পানি শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করে বিশুদ্ধ খাবার পানিও সরবরাহ করার কথাও ছিল সেখানে। বস্তিবাসীর জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে তাদেরও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন তো হয়ইনি, উল্টো ‘গরিবের হাসপাতাল’ বলে পরিচিত রাজশাহী সিটি হাসপাতালটি বেসরকারি পরিচালনায় তুলে দেওয়া হয়। পরে সেই হাসপাতাল করোনার শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফের চালু করা হয়েছে হাসপাতালটি। শিশু হাসপাতালের ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে সেখানে এখনও পুরোদমে কাজ শুরু হয়নি। রাজশাহী ওয়াসার প্রস্তাবিত পানি শোধনাগার প্রকল্পের ঋণচুক্তি হলেও কাজ শুরু হয়নি।
লিটন গতবারের নির্বাচনী ইশতেহারে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের জন্য বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ করে সহজ কিস্তিতে মালিকানা দেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কোনো কাজই করেনি সিটি করপোরেশন। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আলেম ও সাংবাদিকদের জন্য আলাদা আবাসন এলাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ছিল ইশতেহারে। এর একটিও পূরণ হয়নি। প্রতিটি ওয়ার্ডে বিনোদন ও খেলার মাঠের কথা বলা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বনগ্রাম এলাকায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক স্থাপন করা হয়েছে। তবে নগরীর সব থেকে বড় বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সংস্কারের নামে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে রিসোর্ট, যা বেসরকারি মালিকানায় পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে রাসিক।
তাঁর ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল নগরের অবকাঠামো উন্নয়ন। এই দফার প্রতিশ্রুতি পূরণের সংখ্যাই বেশি। তবে এর মধ্যে নগরীর চারদিকে রিং রোড ও লেক নির্মাণের ঘোষণা থাকলেও রিং রোড হয়নি। নতুন লেক নির্মাণ না হলেও পুরোনোগুলো সংস্কারের কাজ হয়েছে। নগরীজুড়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণশৌচাগার নির্মাণের প্রতিশ্রুতির কিছুটা পূরণ হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস নির্মাণের প্রতিশ্রুতির মধ্যে দুটি ফ্লাইওভার দৃশ্যমান। আর দুটি ওভারপাস শেষ সময়ে উদ্বোধন হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা বাস্তবে রূপ পায়নি। ইশতেহারে থাকা বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের কাজ চললেও শেষ হয়নি এখনও। খাস পুকুর ভরাট বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও সংরক্ষণের তালিকায় থাকা নগরীর একাধিক বড় পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়েছে মেয়র লিটনের এই মেয়াদেই। তবে রাসিকের গুটিকয়েক ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজে এখন রাস্তা ও ড্