তানোরে আলু বীজ ও সার নিয়ে ভোগান্তিতে কৃষক

প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

সুজন তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি:

রাজশাহী তানোর বরেন্দ্র অঞ্চল নামে পরিচিত এ উপজেলায় আলু উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থান হওয়ায়, রোপা আমান ধান কাটা-মাড়াই শেষ না হতেই আলু লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করছে।বর্তমানে আলু চাষে কৃষকরা মাঠে নেমে পড়েছে।তবে চাষে ব্যপক খরচে বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা।কৃষকদের অভিযোগ তানোরে আলু বীজ ও সার সিন্ডিকেটের কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।ন্যায্যমূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন না তারা।কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে আলুবীজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।একইভাবে সারের দামও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে।এতে আলু চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানিয়েছে, কেউ যদি সিন্ডিকেট করে বীজ ও সার বিক্রি করে,তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য নির্ধারন করা রয়েছে।যা পার্শ্ববর্তী উপজেলা চেয়ে বেশি।তানোর এ লাকায় উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।তবে এবারের আলু চাষ শুরুর পর কৃষকরা জানিয়েছেন,কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক দামে বীজ বিক্রি করছেন।স্থানীয় কৃষকরা বলেন,তারা সরকার বা কোম্পানির নির্ধারিত দামে আলু বীজ পাচ্ছেন না।বেশি দামে তাদের বীজ ও সার কিনতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।কৃষকরা দাবি করছেন,এই সিন্ডিকেট ভাঙা প্রয়োজন।অন্যথায় তারা আর্থিকভাবে বিপযস্ত হয়ে পড়বেন।তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা অভিযোগ করছেন,আলুর বীজ ও সার সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাচ্ছেনা।অথচ দাম একটু বেশি দিলেই সার ও বীজ পাওয়া যাচ্ছে।কিনতে তাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।গত বছরে যে বীজ কিনতে হয়েছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা,সে বীজ এখন ৫০০০থেকে ৬০০০টাকায় কিনতে হচ্ছে।তার পর ও পাওয়া যাচ্ছে না।বীজ ও সার কিটনাশকের সংকটের অযুহাত লেগে আছে।একইভাবে সারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।এমওপি ও ডিএপি সারের দাম ৪০০থেকে ৫০০টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে প্রতি বস্তায়। এতে স্থানীয় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।অনেকে স্টোরের রাখা আলুই বীজ হিসেবে ক্রয় করতে স্টোরে ছুটছেন।এ কারণে স্টোরের আলুর দামও বড়েছে।এবিষয়ে উপজেলার কৃষ্ণ পুর গ্রামের কৃষক রাজ্জাক বলেন,৩ হাজার ১৮০টাকার ব্র্যাক সিডের আলু কিনতে গিয়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে।সবাই দাম বেশি নিচ্ছে।তা হলে আমরা চাষাবাদ কীভাবে করব?একই ভাবে কৃষক সানোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন,এবার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুবীজের দাম বেশি নিচ্ছে।আমরা সরকার বা কোম্পানির নির্ধারিত দামে আলুর বীজ পাচ্ছি না।সারও পাওয়া যাচ্ছে না।কৃষক ময়েজ বলেন,সার ও বীজ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে আছে।না হলে ৩ হাজার টাকার বীজ ৪ হাজার ৪০০ টাকায় কেন কিনতে হচ্ছে?এক বস্তা সার কিনতেও দুই থেকে তিন শ’টাকা বেশি নিচ্ছে।এ ভাবে আলুচাষ করে লাভবান তো দুরের কথা লোকশান হতে পারে। অপর দিকে আলু ব্যবসায়ী উজ্জ্বল জানান,তানোরের অধিকাংশ আলু গুলো দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশে রপ্তানীর কারনেই আলুর দাম বাজারে বেড়ে গেছে।উপজেলার বীজ বিক্রেতাদের দাবি বাইরে থেকে বেশী দামে বীজ ক্রয় করতে হচ্ছে।তাই বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।স্থানীয় চাষীরা জানান,শুধু বাজার মনিটরিং করেই এ সমস্যা সমাধান হবে না।ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে আলুবীজ ও সারের দাম যদি নিয়ন্ত্রণে না আসে,তবে তারা আর্থিকভাবে বড় বিপদে পড়বেন। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন,কৃষকদের জন্য আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।বিশেষত সরকারের পক্ষ থেকে যদি আলুবীজ ও সার সরবরাহের জন্য সরাসরি উদ্যোগ নেওয়া হয়,তা হলে বাজারে কৃত্রিম সার ও বীজ সংকট সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।এব্যাপারেউপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,বাজারে খাওয়ার আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বীজের উপর প্রভাব পড়েছে।কৃষকদের স্টোরে যে আলু ছিল তা বীজহিসেবে ব্যবহার হতো।তবে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত কেউ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন,এছাড়া সারের অতিরিক্ত দাম নেয়ার সুযোগ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।সার ও আলু বীজ কৃষি খাতের গুরুত্বপূর্ন উপাদান। এসব নিয়ে কোন অনিয়ম হলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।