Md Md

Badsha

প্রকাশিত: ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২৪

শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজেই রোগী

এম বাদশা মিয়া ঝিনাইদহ

লোকবলের অভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এর সুযোগে তৈরি হয়েছে দালালদের কয়েকটি চক্র। তারা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনদের নানা নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। দালাল নির্ভর অধিকাংশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান মালিকদের উদ্দেশ্য যেনতেন চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানো। অথচ মানসম্মত অপারেশন থিয়েটার (ওটি) রোগ নির্ণয়ের জন্য উন্নতমানের কোন যন্ত্রপাতি নেই। নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে প্রসূতি ও নবজাতক। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে এসব প্রাইভেট ক্লিনিক বন্ধ করা হলেও মুহুর্তে ফের কার্যক্রম চালু হয়ে যায়। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে অসাধুরা অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান চালু করার সাহস দেখাচ্ছেন।শৈলকপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ২৩টি। এরমধ্যে ৯টিতে কেউ নেই। বাকি ১৪টির মধ্যে একজন চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত রযেছেন। ২ জন প্রেষণে রয়েছেন ঝিনাইদহ শিশু ও সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র একজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ খালি থাকায় উপজেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে গাইনী ও অ্যানেসথেসিয়া পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন। এ কারণে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এতে তাদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চলে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী চলে যান স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। হাসপাতালে সুইপারের দুইটি পদ খালি রয়েছে। এ কারণে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার হয়না নিয়মিত। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজিতে ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণের সংকট রয়েছে। নেই জলাতংকের ভ্যাকসিন। হাম-রুবেলা ও পোলিও টিকারও মাঝেমধ্যে সংকট দেখা যায়। এছাড়া শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে প্রায় ৩০ দালালের সক্রিয় উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫। হাসপাতালের চারপাশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি এসব দালালকে পালছে। রোগী ভাগানোর ওপর দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন ঢোকে দালালের পকেটে। দালালদের ‘প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব’ তৈরি করতে দেওয়া হয় লোভনীয় টাকার প্রস্তাব। রোগীদের অভিযোগ, দালালরা হাসপাতালের মধ্যে ও বাইরে আড্ডা দেওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা নিতে পারেন না। এর সাথে হাসপাতালের কিছু ওয়ার্ডবয় জড়িত, সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দালালচক্র রোগীদের নানা প্রলোভনে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান।

শৈলকুপার আসানগর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, ডায়াবেটিকস ও প্রেসারের ওষুধ না থাকায় হতদরিদ্রদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়।নাজমুল হোসেন নামে এক রোগী জানান, হাসপাতালে রয়েছে পুরান মডেলের একটি এক্স-রে মেশিন। এই পুরান মেশিন দিয়ে ঠিকমত এক্স-রে করা যায় না। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। রিপোর্টেও আসে ভুল।  জেনারেটর থাকলেও তেল বরাদ্দ নেই। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকেন রোগীরা। অভিযোগ রয়েছে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই নেই নেই সংকটের কারণে প্রায় ৩০ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। তারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে হাসপাতালে আসা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ক্লিনিকে।কুশবাড়িয়া গ্রামের রোগীর স্বজন আনোয়ার মন্ডল বলেন, হাসপাতালে গেইটে ঢুকতেই একদল মানুষ এসে হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক বাজে কথা বলে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। তাদের এসব কথাবার্তায় দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়।সুজন বিপ্লব নামের একজন সামাজিককর্মী বলেন, সরকারি হাসপাতালে সাধারণ দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা নিতে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে ক্লিনিকে গিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালে, তাহলে এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু থাকে না। তাই দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও হাসপাতালে দ্রুত শতভাগ চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান তিনি।শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন জানান, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত সেবা আমরা দিতে পারছি না। তবুও সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব তা রোগীদের দিচ্ছি। তিনি বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া দালালদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে ।