Md Md Badsha প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৪ সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ অফিস ডেস্ক > বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান, তিনি ছিলেন এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী।২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর সকাল ৯ টায় ঢাকায় ল্যাবএইড হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।তিনি ১৯৩৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার কাঁচেরকোল গ্রামে জমিদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।কাঁচেরকোল গ্রামের তৎকালীন জমিদার কাজী সরোয়ার উদ্দীন তার পিতামহ। তার পিতার নাম ডা. হাবীবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে ১৯৯৭ সালে দক্ষিন আফ্রিকার শহর প্রিটোরিয়াতে কিংবদন্তী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে বাংলাদেশের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আমন্ত্রণ জানাতে দেখা করেন ম্যান্ডেলার সাথে।১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিসের চাকুরী ছেড়ে মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও নেতৃত্বে ওয়ালিউর রহমান বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদস্যপদ অর্জন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েন এবং এক পর্যায়ে তাকে ওএসডি করা হয়। প্রধান কারণ দেখানো হয় তিনি বঙ্গবন্ধু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ এবং ১৭ তারিখে বিলিয়ায় দুইটি সেমিনারের আয়োজন করেন। ‘জেনারেলদের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড“ শীর্ষক ওই সেমিনারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান তখন বিলিয়ার আজীবন সদস্য। এসময় বিলিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত কামরুদ্দিন আহমেদ। তাকে নিয়ে তিনি সেমিনারের আয়োজন করেন।১৯৬৬ সালেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে যোগ দেন ওয়ালিউর রহমান। পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিসে যোগ দিতে তাকে লাহোরে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৮ সালে তার প্রথম পোস্টিং হয়েছিল দিল্লী, পরে সিদ্ধান্ত হয় কোলকাতা কিন্ত অবশেষে পাঠানো হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ধারক অভিযোগ তুলে তাকে ভারতে পাঠায়নি পাকিস্তান সরকার।্জকার্তা গিয়ে তিনি সেখানে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ও শাহ এ এস এম কিবরিয়াকে পেয়েছিলেন। দুজনই তার জীবনে বড় রেখাপাত করেছিলেন। ইন্দোনেশিয়া বসেই ওয়ালিউর রহমান শুনতে পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেছে পাকিস্তান সরকার।১৯৬৮ সালে ওয়ালিউর রহমানের ট্রান্সফার হয় সুইজারল্যান্ডে।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ওয়ালিউর রহমান ছিলেন ৭ নং হেলভেশিয়া প্লাসে। সুইস পার্লামেন্টের সামনে হাজার হাজার সুইস নাগরিক সমবেত হয়ে একটি সমাবেশ করেছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। ঐ সমাবেশটি চিলন্ড্রেন অব সুইজারল্যান্ড নামে খ্যাত। সেখানে তারা ৪০ হাজার ফ্রাঙ্ক ফান্ড তুলে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলো। ওয়ালিউর রহমান সেখানে বক্তব্য রেখেছিলেন। আর ১৯৭২ সালে এখানেই বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন দীর্ঘ ২২ দিনের জন্য গোটা পরিবারসহ। ওয়ালিউর রহমান তখন সুইজারল্যান্ডের হেড অব মিশন। জেনেভায় লা রিজার্ভ হোটেলে বঙ্গবন্ধু বাইশ দিন ছিলেন পরিবারসহ। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু আবার জেনেভায় আসেন বাংলাদেশ ইনভয়স কনফারেন্স করতে।ওয়ালিউর রহমান এর হাই প্রোফাইল ও তার সফল কূটনীতির জন্য বিভিন্ন সময় সামরিক সরকার এর রোষানলে পড়েছিলেন বারবার। জেনারেল এরশাদ পরবর্তীতে তার গুণাবলী এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করেছিলেন।বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শুরু হলে খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়। ওয়ালিউর রহমান ছিলেন বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চীফ কো-ওর্ডিনেটর। খুনিদের ফিরিয়ে আনতে তিনি পৃথিবীর অনেক দেশে ও অনেক শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এবং তার সাথে ছিলেন এনএসআই এর প্রধান জনাব মুস্তাফিজুর রহমান। লিবিয়াতে রশিদের আস্তানায় তিনি যেতে গিয়ে মৃত্যু বরনের অবস্থা হয়েছিল। লিবিয়াতে ওয়ালিউর রহমানের প্রাণনাশের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারকগন ও প্রসিকিউটররা ওয়ালিউর রহমানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। Forgotten War: Forgotten Genocide বইটি লিখেছেন তিনি এই ট্রেনিং এর জন্য। আর ট্রাইব্যুনালের আইনের উপর লিখেছেন Brief History of the Framing of the International Crimes (Tribunals) Act, ১৯৭৩.ওয়ালিউর রহমান বেশ কিছু গ্রন্থের রচয়িতা। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা দশ । তিনি International Institute for Strategic Studies (IISS) এর একজন প্রথম সারির সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে পূর্ব-পশ্চিম সমস্যা নিয়ে, চীন আমেরিকার দ্বন্ধ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। বাংলাদেশের কথাও বার বার বলেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওয়ালিউর রহমান বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টক-শো, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, গবেষনা ও হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সেমিনারের আয়োজন করেছেন যা সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্যকে আরোও সুসংহত করে। Post Views: 0 SHARES প্রচ্ছদ বিষয়: