অর্থের অভাবে অনিশ্চিত ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রনির উন্নত চিকিৎসা। ঢাকার টাইম ঢাকার টাইম প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪ রাকিবুল ইসলাম তুরান রিপোর্টার :ফরিদপুর জেলা। ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন,মো:রনি হোসেন(৩১)। তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের দৈত্যরকাঠি গ্রামের এনামুল হোসেনের ছেলে। শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে জীবন যাপন করছেন তিনি । হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে তার জীবন তছনছ হয়ে গেছে। মৃত্যুর কাছ থেকে বেচে ফিরেছেন কিন্তু মৃত্যু যন্ত্রণা এখনো তাকে ছাড়েনি। পারিবারিক সূত্রে সূত্রে জানা যায়, মো. রনি হোসেন এক সন্তানের পিতা । তিনি রাজধানীর একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন । ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রদের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। গত ৫ আগস্ট আনুমানিক বেলা ১১টা: দিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন মো: রনি হোসেন । গুলিতে তার মুখগহ্বর ছেদ করে ঘাড়ের হাড়ের ডিস্কের মধ্যে বিদ্ধ হয়। তার ঠোঁট, সামনের কয়েকটি দাঁত, জিহ্বা, মুখগহ্বরসহ মেরুদণ্ডের হাড়ের ডিস্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।দুই মাস চিকিৎসা হওয়ার পরেও শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে গেছে তার। মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে জীবন যাপন করছেন তিনি। মো. রনি হোসেন কাছ থেকে জানা যায় , গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান তিনি। আন্দোলনরতরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন । ওই হাসপাতালেই চলে রনির প্রাথমিক চিকিৎসা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচার করেও গুলি বের করতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। পরে খরচের কারণে ওই হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ১৮ দিন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় প্রায় ১২ লাখ টাকার মোটা বিল ধরিয়ে দেয়া হয় তার পরিবারের সদস্যদের হাতে। ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এ সময় এক সমন্বয়কের মাধ্যমে শুধু ওষুধের বিল ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে ছাড় পান তারা। তিনি আরও জানান, সমন্বয়কদের মাধ্যমে সাভার সিআরপি হাসপাতাল ও ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সর্বশেষ সিআরপিতে কয়েক ঘণ্টা ও ইবনেসিনায় ২ মাস ৭ দিন ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে তার।তারপর অর্থের অভাবে ফিরে আসতে হয় বাড়িতে। রনি হোসেনের স্ত্রী মোছাম্মৎ শান্তা ইসলাম বলেন, প্রায় চার মাস হতে চললো। আমার স্বামী শরীরে গুলির যন্ত্রণা নিয়ে দিন-রাত কষ্ট করে। তীব্র যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। চোখের সামনে তার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না। তিনি স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। মো. রনি হোসেনের মা নাজমা বেগম বলেন, একদিকে এনজিওর কিস্তির চাপে রাতে ঘুম আসে না। ঘরে এক বছরের নাতির দুধ কেনা, পরিবারের সদস্যদের দু’বেলা দুমুঠো ভাত কিভাবে জুটবে সারাক্ষণ এ চিন্তায় থাকি।এদিকে কলিজার টুকরো সন্তান মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে জীবন যাপন করছে, অসহায় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই। এ ব্যাপারে রনির বাবা মো. এনামুল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সমন্বয়করা দেখতে আসেন। নাম-ঠিকানা লিখে নেন। প্রতিশ্রুতি দেন চিকিৎসাসহ আর্থিক সাহায্য-সহায়তার। ছেলের চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে, মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা সাহায্য তুলে ৭ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। এখন আর চিকিৎসা চালাতে পারছি না। যেখানে ঠিকঠাক মতো আমার সংসারই চলে না, সেখানে ছেলের চিকিৎসা করাবো কিভাবে। ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন নবাব বলেন, রনির শারীরিক অবস্থা খারাপ। জানা মতে সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন খরার ক্ষমতা নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহায়তার চেষ্টা করা হবে। বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। মোঃ রনি হোসেনের বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। তবে এখন যেহেতু জানতে পারলাম দ্রুত সময়ের মধ্যে তার খোঁজখবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহায়তা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। Post Views: 0 SHARES সারা বাংলা বিষয়: