Md Md

Badsha

প্রকাশিত: ১০:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪

শৈলকুপার শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মনোরঞ্জন জোয়ারদার শহীদ হিসেবে যার সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি আজও

এম বাদশা মিয়া ঝিনাইদহ 

গলায় সিমেন্টের বস্তা বেঁধে ডা. মনোরঞ্জনকে নদীতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।চিকিৎসক মনোরঞ্জন জোয়ারদার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। সেবা করতেন যুদ্ধে যাওয়া দামাল ছেলেদের। পাশাপাশি নিজ বাড়িতে নিয়মিত সাহিত্যের আসর বসাতেন। লেখালেখিও করতেন। একদল রাজাকার তাঁকে একাত্তরের ২৮ অক্টোবর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। নরপিশাচের দল রাতে মনোরঞ্জনের গলায় সিমেন্টের বস্তা আর পায়ে ইট বেঁধে শৈলকুপার কুমার ব্রিজের ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়।

শহীদ মনোরঞ্জন জোয়ারদারের জন্ম ১৯০৭ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা শহরের সরকার পাড়ায়। ব্রজমোহন জোয়ারদার এর একমাত্র ছেলে ছিলেন তিনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাশ করে ভারতে চলে যান চিকিৎসক হতে। এল এম এফ পাশ করে গ্রামে ফিরে আসেন মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে।শৈলকুপার সাহা ফার্মেসীতে বসে তিনি রোগী দেখতেন।
মনোরঞ্জন জোয়ারদারের ছয় মেয়ে। জীবিত আছেন একজন পুষ্প রানী জোয়ারদার। তিনি স্বামী মনোজ কুমার সরকারের সঙ্গে এখন কুষ্টিয়া সদরের হরিনারায়নপুর এলাকায় থাকেন। মনোরঞ্জন জোয়ারদারের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত রয়েছে বাংলা একাডেমির ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ’ গ্রন্থে। পুষ্পরানী জানান, মুক্তিযুদ্ধের আগেই তাঁর তিন বোন ভারতে চলে যান। তাঁদের সেখানে বিয়ে হয়েছে। সেখানেই বসবাস করেন। তিন বোন দেশে ছিলেন। তিনি সবার ছোট। তাঁদের মা মুক্তিযুদ্ধের আগেই মারা গেছেন। যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি খারাপ হলে বাবা অন্য তিন বোনকেও ভারতে পাঠিয়ে দেন। তবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য গ্রামেই থেকে যান।
পুষ্প রানীর স্বামী মনোজ কুমার জানান, তাঁর শ্বশুরের চিকিৎসায় অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। একারনে রাজাকাররা তাঁর ওপর খুব ক্ষিপ্ত ছিল। একাত্তরের ২৮ অক্টোবর মনোরঞ্জন জোয়ারদার বাড়িতে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় রাজাকাররা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারা খাবার খাওয়া অবস্থায় তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, রাজাকাররা রাতে শৈলকুপার কবিরপুর সেতুর ওপর নিয়ে গলায় সিমেন্টের বস্তা আর পায়ে ইট বেঁধে জীবিত অবস্থায় কুমার নদের পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তাঁর মৃত দেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।পুষ্প রানী বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে দেখতে পান তাঁদের বেশ কিছু জমি অন্যেরা দখল করে নিয়েছে। বাড়িটিও বসবাসযোগ্য ছিল না। সে কারনে ভিটেমাটি যেটুকু ছিল তা বিক্রি করে দিয়ে তাঁরা কুষ্টিয়ায় চলে আসেন। তাঁদের আক্ষেপ, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আত্মদান করলেও মনোরঞ্জন জোয়ারদার এখনও শহীদ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাননি।