নরসিংদীতে ৬০ ঘণ্টায় উদঘাটিত অটোরিকশা চালক কাঞ্চন হত্যার রহস্য।

মোঃ কাউছার মিয়া।
নরসিংদীর বেলাবতে অটোরিকশা চালক কাঞ্চন মিয়াকে হত্যার পর অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় একটি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। আলামত বিহীন হত্যাকাণ্ডের ৬০ ঘণ্টার মধ্যে এর রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার ঘটনায় নিহত কাঞ্চন মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম বাদী হয়ে বেলাব থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে মনোহরদী থানা পুলিশ ও বেলাব থানা পুলিশের সহযোগীতায় গ্রেফতার করেছে পিবিআই নরসিংদী।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় পিবিআই নরসিংদী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মনোহরদী উপজেলার বাঘিবাড়ী (খানবাড়ী) গ্রামের মমতাজ উদ্দিন খানের ছেলে মো. ইয়াকিন খান (৪৬), তার স্ত্রী রাশিদা (৩৫), বেলাব উপজেলার রাজারবাগ কুমারঘাটা গ্রামের মো. রহিম উদ্দিনের ছেলে মো. কবির হোসেন (২৮) এবং একই উপজেলার চর আমলাব গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে ইমরান মিয়া (২২)।
পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার জানান, গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টায় বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বিন্নাবাইদ বিএম কলেজ সংলগ্ন রাস্তার পাশে একজন অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকার সংবাদ পায় পিবিআই নরসিংদী। পরে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই সদস্যরা। এদিকে নিহত অটোরিকশা চালক কাঞ্চন মিয়ার পরিবারের সদস্যরা মরদেহ পরে থাকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহটি শনাক্ত করেন।
এরপর, সম্পূর্ণ আলামত বিহীন এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে স্ব-উদ্যোগে তদন্তে নামে পিবিআই নরসিংদী। মনোহরদী থানা পুলিশ, বেলাব থানা পুলিশ, তথ্য প্রযুক্তি ও বিশ্বস্ত সূত্রের সহায়তায় নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর, কটিয়াদি এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশা চালক কাঞ্চন মিয়া হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মনোহরদী থানার গোতাশিয়া ইউনিয়ন এর বাঘিবাড়ী গ্রামের মিয়াবাড়ীর ইয়াকিন ও তার স্ত্রী রাশিদা এবং বেলাব থানার কবির নামে একজন নারী ও দুইজন পুরুষকে গ্রেফতার করে এবং চোরাই অটোরিকশা ক্রেতা ও হেফাজতকারী ইমরান নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই সদস্যরা।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদেরকে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায়, গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে একটি মেলায় নিহত কাঞ্চন মিয়ার সাথে পরিচয় হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা কবির হোসেনের। এসময় নিহত কাঞ্চন মিয়া একজন অটোরিকশা চালক এমনটা জেনে তার মোবাইল নম্বরটি চেয়ে নেয় কবির। পরবর্তীতে সে বৃদ্ধ কাঞ্চন মিয়ার অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ধ্যায় ইয়াকিন ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ কটিয়াদীর আরেকটি মেলায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কাঞ্চন মিয়াকে মোবাইলে ফোন করে ভাড়া নেয়। তারা কটিয়াদির ওই মেলায় যাওয়ার পথে এক পর্যায়ে অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্য কৌশলে চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করালে কিছু দূর যাওয়ার পর কাঞ্চন মিয়া তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কবির চালকের আসনে বসে অটোরিকশাটি চালিয়ে বিন্নাবাইদ বিএম কলেজের সামনে এসে পৌঁছালে দূর থেকে একটি মোটরসাইকেল দেখতে পেয়ে মরদেহটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এটি ঘুরে জনৈক ইয়াকুব আলীর ধানী জমিতে গিয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, মাথা নিচের দিকে কাঁদামাটির ভিতরে আটকে যাওয়ায় শ্বাসরোধে কাঞ্চন মিয়া মারা যান। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদেরকে দ্রুততার সাথে গ্রেফতার করায় পিবিআই নরসিংদী সহ মনোহরদী থানা পুলিশ ও বেলাব থানা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছে নরসিংদী জেলার সর্বস্তরের মানুষ। পুলিশের এই কার্যক্রম চলমান রাখলেই কেবল দেশে আইন শৃঙ্খলা বজায় থাকবে বলে মন্তব্য করছেন সবাই। ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ মানুষ জড়িতদের ন্যায় বিচারের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
Post Views: 4