-
ভাঙ্গায় পুর্ব শত্রুতার জের ধরে অতর্কিত হামলা আহত ১০
এম বাদশা মিয়া ঝিনাইদহ সংবাদদাতাঃ মাটি ছাড়াই আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সবজির চারা উৎপাদনে চমক দেখিয়েছেন ঝিনাইদহের কৃষক সাইদুর রহমান। এ পদ্ধতির চাষাবাদে লাভবান হচ্ছেন সবজী চাষিরা।ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মাটির পরিবর্তে জৈবসার মিশ্রণ ও নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করে চারা তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক সাইদুর রহমান । এভাবে চারা উৎপাদন করে কৃষি খাতে একটি আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করায় এসব চারার মানও বেশ ভালো। এ পদ্ধতির নাম ‘কোকোডাস্ট’।এ পদ্ধতিতে সবজির চারার মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে। আধুনিক এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন মাটির স্পর্শ ছাড়াই প্লাস্টিকের ট্রেতে সম্পন্ন হয়। এতে চারা সুস্থ ও সবল থাকে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। সর্বোপরি এ চারার মাধ্যমে সবজি চাষ করলে কৃষক শতভাগ লাভবান হয়। শুধু স্থানীয় কৃষকরাই যে এতে আগ্রহী হচ্ছেন তা নয়, বাণিজ্যিকভাবে এসব চারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারের পাশে একটি শেডের চারদিকে নেট (জাল) দিয়ে ঘিরে কোকোডাস্ট পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করছেন নার্সারি মালিক সাইদুর রহমান। ওই এলাকার হেলাল উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে সাইদুর রহমান ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষিতে আসেন।একপর্যায়ে চারা কিনতে ঝামেলা হওয়ায় নিজে চারা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুরুতে অনলাইনের মাধ্যমে নারিকেলের ছোবড়া, প্লাস্টিকের ট্রেসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে নিজ অফিসের সামনে চারা উৎপাদন করেন । প্রথমে ৫ হাজার চারা উৎপাদন করলেও বর্তমানে তার নার্সারিতে তিন লাখ চারা তৈরির ধারণক্ষমতা রয়েছে।টাইটান এগ্রো নামের এ নার্সারিতে বর্তমানে টমেটো, মরিচ, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, স্কচ, লেটুসপাতা, পেঁপে, লাউ, ফুলকপি ও বাধাকপিসহ ১৫ থেকে ২০ প্রকারের চারা তৈরি হচ্ছে। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পেলেও বর্তমানে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ চারাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান বলছেন, কোকোডাস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে কেঁচো সারের সমন্বয়ে মাটি ছাড়াই সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে প্লাস্টিক ট্রেতে। আধুনিক এ পদ্ধতিতে তৈরি হাউজের চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ নিশ্চিত হয় এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় থেকেও সবজির চারাগুলো রক্ষা পায়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ও ঝড়-বৃষ্টি থেকে চারাগুলো নিরাপদে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ পলিথিন।সাইদুর রহমান জানান, আমি মূলত ব্যবসায়ী মানুষ। করোনার সময়ে যখন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায় তখন কৃষিতে আসার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে আমার অফিসের সামনে ৫ হাজার চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর বাড়ির পাশে একটি কারখানা তৈরি করে সেখানে বর্তমানে তিন লাখ চারার তৈরির উপযোগী হয়েছে।তিনি আরও জানান, বাজারের অন্যান্য চারার থেকে একটু দাম বেশি হলেও চারা মারা যাওয়ার হার একদমই কম। তবে এটা অনেকেই বুঝতে চাই, আবার অনেকে চাই না। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ শতাংশ কৃষক এ সিডলিং নার্সারি করে, তারা আধুনিক এ পদ্ধতিতে উৎপাদন হওয়া চারা দিয়ে নার্সারি করলে বেশি লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।এ নার্সারিতে চারা তৈরি ও পরিচর্যায় কাজ করছেন ৫ জন শ্রমিক। তারা বলছেন, প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন তারা। এতে তাদের সংসারেও ফিরেছে সচ্ছলতা। শ্রমিকরা বলেন, ভোর থেকে দিনে দুই-তিনবার চারার পরিচর্যা করতে হয়। মাসে যা বেতন পাই, তাতে আমার সংসার খুবই ভালো চলছে।শৈলকুপা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরিফুজ্জামান বলেন, কৃষক সাইদুর রহমান প্রথমে আমাদের কাছ থেকে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাকে আমরা কৃষি লোনসহ কিভাবে চারা উৎপাদন করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বর্তমানে সেখানে আরও একটি মশলা প্রকল্পের চারা উৎপাদনের জন্য আধুনিক শেড তৈরি করতে যাচ্ছি।তিনি বলেন, আধুনিক এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের সুবিধা হলো চারাগুলো রোগমুক্ত থাকে, শিকড় ছিড়ে যায় না, কোনো রোগবালাই প্রবেশ করতে পারে না। ফলে এ চারা খুবই দ্রুত বড় হয়। এ চারা ব্যবহার করলে কৃষক ৭ থেকে ১০ দিন আগে ফলন পায়। মৌসুমের আগেই বাজারে যে সবজির দাম বৃদ্ধি থাকে। এ সময় কৃষক আগাম সবজি বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়। এ কারণে মাটি ছাড়া চারা উৎপাদন পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।